Memorial

নৈসর্গিক সৌন্দর্যের গুরু সতাং পাহাড়, পর্যটনের নতুন সম্ভাবনা

নৈসর্গিক ভূ-স্বর্গ পার্বত্যাঞ্চলের আসল সৌন্দর্য রাঙামাটিতেই লুকায়িত। রাঙ্গা মাটি আর কালো পাথরের সুউচ্চ পাহাড়, সুবিস্তৃত স্বচ্ছ লেক আর অসংখ্য ঝর্ণার মিলিত সৌন্দর্য বিশ্বের খুব কম স্থানেই দেখা যায়। রাঙামাটির মতো প্রাকৃতিক ভূ-স্বর্গ দেশে দ্বিতীয়টি নেই। বিশ্বে যে ক’টি স্বাদু পানির হ্রদ আছে তার মধ্যে সৌন্দর্য ও আয়তনে কাপ্তাই লেক অন্যতম। এতো এতো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমির মধ্যে উল্লেখযোগ্য আরেকটি হলো গুরু সতাং পাহাড়।

গুরু সতাং পাহাড়

রাঙামাটির লংগদু উপজেলায় গুলশাখালীর সম্ভাবনাময় আরেক পর্যটনস্পটর গুরু সতাং পাহাড় চূড়া। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের এখানে চুম্বকের মতো টেনে আনার সকল সৌন্দর্যগুণই আছে এই পাহাড়ের। যদিও এখন পর্যন্ত এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর কোনো উদ্যোগই চোখে পড়েনি।

লংগদু ও বাঘাইছড়ি উপজেলার সীমান্তে কালো পাহাড় ঘেঁষে পর্যটকদের আকর্ষণে নতুন রুপে সেজেছে গুরু সতাং পাহাড় চূড়া। লংগদু ও বাঘাইছড়ির সীমার বুকে উত্তর-পূর্ব দিকে তাকালেই গুরু সুতাং পাহাড়ের চূড়া দেখা যায়। ওখানকার আর দশটা পাহাড় চূড়ার চেয়ে খানিকটা উঁচু এবং ত্রিভুজাকৃত্রির চূড়াটি দেখতে একটু অন্যরকম মন জুড়ানো।

লংগদু উপজেলার গুলশাখালী থেকে পূর্ব দিকে ১৫ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে বিজিবি ক্যাম্প পর্যন্ত মোটরসাইকেল যোগে, বাকি ২-৩ কিলোমিটারের মতো পথ পাঁয়ে হেটে গেলেই দেখা মিলবে এই গুরু সতাং পাহাড় চূড়ার। এ নতুন পর্যটন স্পট হলে এ অঞ্চলের মানুষের জীবন মান উন্নয়নে যুক্ত হবে অবিশ্বাস্য এক নতুন মাত্রা, নতুন পথ, নতুন উপাদান। সেটা কত দ্রুত এবং বৈচিত্রময় হবে সেটা বুঝতে হলে সাজেকের দিকে তাকালেই সহজে ধারনা পাওয়া যাবে। তবে কিছু মানুষ আছে যারা রাস্তার অপেক্ষায় থাকে না, বরং রাস্তা নির্মাণের পথ দেখান। এমন মানুষেরাই খুঁজে বের করেছেন রাঙামাটির সাজেক ভ্যালি, লংগদুর গুরু সতাং সহ আরও অনেক পর্যটন স্পট।

দেশের অন্যতম সেরা সম্ভাবনাময় পর্যটন স্থান হতে পারে এখন পর্যন্ত লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকা গুরু সতাং হিল রেঞ্জ। দেশের ১১টি হিল রেঞ্জের মধ্যে বরকল হিলরেঞ্জের অন্তর্গত জুরাছড়ি, বরকল উপজেলা হেড কোয়াটার হয়ে লংগদু উপজেলার গুরুসতাং হয়ে সাজেক পার হয়ে ভারতের ত্রিপুরা ও মিজোরাম সীমান্তের সুউচ্চ বেটলিন পাহাড় পর্যন্ত এই হিলরেঞ্জের অবস্থান। এই রেঞ্জে সাজেকের কংলাক পাহাড় চূড়া প্রায় ২৪০০ ফুট উঁচু।

স্থানীয় বিজিবি জোনের তথ্য মতে, তার পরই গুরু সতাং পাহাড় চূড়া, যার উচ্চতা প্রায় ২০০০ ফুট। সাজেকের কংলাক চূড়া জয় করা গেলেও গুরুসতাং চূড়া এখনো অজেয়। অনেক চড়াই উৎরাই পার হয়ে এর চূড়ায় উঠতে হয়। তাই তেমন কেউই এর চূড়ায় উঠেনি।

গুরু সতাং পাহাড়ের উপরিভাগ প্রায় পাঁচ-ছয় কিলোমিটার, অনেক প্রশস্ততা নিয়ে বিস্তৃত। নিচের বিস্তৃত রাঙামাটির লেক ভিউ, কাট্টলী বিল, পাহাড়ের কোলের মেঘ, ওপারের কর্ণফুলী নদীর উৎস ভারতের মিজোরামের সুউচ্চ লুসাই পাহাড় ভিউ, কর্ণফুলী রিভার ভিউ, পাদদেশের ছড়ায় অনেক সুন্দর ট্রেইল, ঝর্ণা, পাদদেশের পাংখো পাড়া, চাকমা পাড়া, সর্বোপরি গুলশাখালী হতে পাহাড় চূড়ার এই ১২ কিলোমিটার একটি ভয়ংকর সুন্দর ট্র্যাকিং রুট, যা পর্যটকসহ হিল ট্র্যাকারদের সহজেই আকৃষ্ট করবে। এর চারপাশে ছড়িয়ে থাকা নানা প্রাকৃতিক উপাদান গুরুসতাং হিল রেঞ্জকে ভিন্নমাত্রায় বৈচিত্র্যময় ও দেশের অন্যতম সুন্দর একটি পর্যটন স্পটের কাতারে দাঁড় করিয়েছে, কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এসব কিছুই এখনো লোকচক্ষুর অন্তরালে!

গুরু সতাং পাহাড় চুড়া সংলগ্ন উপজাতি পাংখোয়া ও লুসাই সম্প্রদায়ের স্থানীয়রা জানান, সাজেক ভ্যালির চেয়েও অনেক অপূর্ব এবং দর্শনীয় স্থান হবে গুরু সতাং পাহাড় চূড়া। এখানে পর্যটক নগরী হিসেবে গড়ে তোলা হলে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবে এলাকার মানুষ। সাথে সাথে সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটবে। ইতোমধ্যে এ দর্শনীয় স্থানে প্রাথমিকভাবে দেশের বিভিন্ন এলাকা হতে পর্যটক আসা শুরু করছে। ভ্রমণ করে গেছেন অনেক নামী দামী মানুষ।

পাহাড়ে ঘুরতে আসা একজন ভ্রমণ পিপাসু বলেন, গুরু সতাং পাহাড় চূড়া ও পাংখোয়া পাড়াস্থ নওয়াপাড়া বিজিবি ক্যাম্প হওয়ার পরে এ এলাকায় অনেকেই গিয়েছেন। এক সময় নিরাপত্তাহীনতার কারণে কেউ সেখানে যেত না। তবে অনেকের কাছে পাংখোয়া পাড়ার গল্প শুনেছি কিন্তু বাস্তবে গিয়ে ঘুরে না আসলে বুঝা যাবে না প্রকৃতির ধরন।

তিনি বর্ণনায় আরও বলেন, নতুন করে ডাক শুনেছি গুরু সতাং পাহাড় চুড়ার। হাতছানি দিয়ে ডাকছে পর্যটকদের তবে এ ডাক শুধু গুরু সতাং ভ্রমণের ডাক নয়, বরং শুনেছি বাংলার দার্জিলিং খ্যাত সাজেকের মত আরো একটি নান্দনিক পর্যটন স্পট গড়ে ওঠার ডাক।

সাজেকের সকল বৈশিষ্ট্যই আছে এখানে, আছে তার চেয়েও বেশি কিছু। পর্যটকরা গুরু সতাং পাহাড় চূড়া থেকে পশ্চিম দিকে তাকালে দেখতে পাবে এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তর কৃত্রিম লেক এবং এর নয়নাবিরাম দৃশ্য। আকাশের সাথে যেন মিতালি পশ্চিমের পাহাড় রাশি। এতদিন উপযুক্ত মন জুড়ানো বিনোদন স্পটটি চোখে পড়েনি বলেই আমাদের অদৃশ্যে দেওয়ালের আড়ালে ছিল গুরু সতাং পাহাড় চূড়া। এবার হয়তো ভ্রমণ পিপাসুদের নতুন গন্তব্য হয়ে উঠবে এ গুরু সতাং পাহাড় চূড়া।

Mohammad Ismail

I am a hardware and software engineer and the founding editor of Travelgreencity.com. On this website we provide support and service for all technology and mobile related issues.

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button