Health

অপারেশন ছাড়া কিডনি পাথরের চিকিৎসা

কিডনিতে পাথর কেন হয়

কিডনির ভিতরে মিনারেল জমে ক্রিস্টাল বা স্ফটিকের মতো পদার্থ তৈরি করে, একে কিডনি স্টোন বলা হয়। অর্থাৎ, ক্যালসিয়াম ও অক্সালেটের ডিপোজিশন হলে এই রোগের উৎপত্তি হয়। স্ফটিকগুলি ধীরে ধীরে জমে পাথরের আকার ধারণ করে।
কিডনিতে পাথর কেন হয়

পাথরটি যখন বড় আকার নেয় এবং সরু মূত্রনালীর মধ্যে দিয়ে যায় তখন মূত্রনালির ভেতরে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে এবং প্রস্রাবের গতি রোধ করে দেয়, ফলে ভীষণ ব্যথার উৎপত্তি হয়। মূলত শরীরে পানির অভাবের ফলে কিডনিতে পাথর তৈরি হয়। কারণ পানির অভাবে লবণ, মিনারেলসহ ইউরিনের অন্যান্য উপাদান শুকিয়ে যায় এবং স্বাভাবিক ভারসাম্য বদলাতে শুরু করলে এই রোগ দেখা দেয়। 

যে খাবারে হতে পারে কিডনিতে পাথর 

১. ক্যাফেইন এবং সোডা আপনি যদি কিডনিতে পাথর রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে প্রচুর পরিমাণে তরল খেতে হবে। কিন্তু তাই বলে কফি খাবেন না। দিনে দুই কাপের (২৫০-৫০০) বেশি কফি, চা এবং কোল্ড ড্রিঙ্কস খাবেন না। 
২. সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরিমাণ কমাতে হবে। প্রক্রিয়াজাত এবং ক্যানজাত খাবার খাওয়াও বাদ দিতে হবে। কারণ এসব খাবারে প্রচুর লবণ দেওয়া হয় সংরক্ষণের জন্য। তারচেয়ে বরং কম লবণযুক্ত খাবার খান। 
৩. বেশি প্রোটিনযুক্ত খাবার মাংস, মাছ এর মতো উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার খাওয়ার পরিমাণও কমিয়ে দিতে হবে। তার চেয়ে বরং চর্বিহীন মাংস সামান্য পরিমাণে তেলে রান্না করে বা সেদ্ধ করে খান। আর বেশি মশলাযুক্ত খাবারও এড়িয়ে চলুন। 
৪. উচ্চহারে চর্বিযুক্ত খাবার পনিরের মতো উচ্চহারে চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়াও বাদ দিতে হবে। তারচেয়ে বরং নিম্নহারে চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার খান। নাস্তার জন্যও আপনার পাস্তুরিত দুধ খাওয়াই উচিত। উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। 
৫. ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি খাদ্য আপনার যদি কিডনিতে পাথর হয়ে থাকে তাহলে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি আছে উচ্চমাত্রায় এমন খাবার এড়িয়ে চলতে হবে আপনাকে। এন্টাসিড ওষুধও এড়িয়ে চলুন কেননা তাতে উচ্চ মাত্রায় ক্যালসিয়াম থাকে। তবে খুবই স্বল্প পরিমাণে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেতে পারেন। এছাড়া মাছের তেল বা ভিটামিন ডি খেতেও সাবধান। কেননা কিডনিতে পাথর থাকলে পরিস্থিতি খারাপ করে তুলতে পারে এসব খাবার। 
৬. অক্সালেট সমৃদ্ধ খাবার আপনার কিডনিতে হওয়া পাথরগুলো যদি হয় ক্যালসিয়াম অক্সালেট তাহলে আপনাকে অবশ্যই অক্সালেট সমৃদ্ধ খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। 
এমন খাবারগুলো হলো, চা, কফি, বিট, লাউজাতীয় তরকারি, মিষ্টি আলু, স্পিনাক, টমেটো স্যুপ, ক্যানজাত ফলের সালাদ, রুবার্ব বা রেউচিনি, স্ট্রবেরি ইত্যাদি। এছাড়া চকোলেট, টোফু, বাদাম এবং মোটাভাবে চূর্ণিত শস্য বাদ দিতে হবে।

যে ভাবে প্রাকৃতিকভাবেই কিডনির পাথর গলাবেন

1. পাতিলেবুর রসে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড ক্যালসিয়ামজাত পাথর তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করে এবং ছোট পাথরগুলোকে ভেঙে বের করে। রোজ সকালে পানির সঙ্গে লেবুর রস মিশ্রিত করে পান করুন অথবা দিনের যেকোনো সময়ে লেবুর রস পান করুন। 
2. লেবুর রস ও অলিভ অয়েল একটি কার্যকরী উপায়। এজন্য প্রয়োজন এক টেবিল চামচ এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল, ১ টেবিল চামচ লেবুর রস ও দেড় মগ পানি। পানিতে এই উপাদান দুটি ভালোভাবে মিশিয়ে দিনে অন্তত তিনবার পান করুন। তবে টানা তিন দিন এই পানীয়টি পান করুন। কিডনির পাথর বেরিয়ে যাবে ফ্লাশের মাধ্যমে। 
3. ডালিম রসে থাকা অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট কিডনিকে সুস্থ রাখতে এবং পাথর ও অন্যান্য টক্সিনকে দূর করতে সাহায্য করে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সারাদিনে কতবার এটি পান করবেন তা ঠিক করুন। 
4. অ্যাপেল সিডার ভিনেগার আরো একটি কার্যকরী প্রাকৃতিক উপাদান। এটি শুধু কিডনির পাথর নয় বরং শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলা করে। আপেল সিডার ভিনিগারে থাকা অ্যাসিটিক অ্যাসিড কিডনিতে পাথর দূর করে এবং ব্যথা কমাতেও সাহায্য করে। এজন্য ২ টেবিল চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার পানিতে মিশিয়ে তিন বেলা খাওয়ার পূর্বে পান করুন। তবে কখনো পানি ব্যতীত এই উপাদানটি গ্রহণ করবেন না। 
5. মুলার রস কিডনির পাথর গলাতে সাহায্য করে। এটি কিডনি পরিষ্কার করে থাকে। এতে রয়েছে ফাইবার, ফলিক এসিড, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং ভোলেটাইলস অয়েল। মুলার রস হজমশক্তি বাড়ায় এছাড়াও মূত্রনালীর সংক্রমণ থেকে বাঁচায়। এজন্য একটি মুলা ধুয়ে নিয়ে কেটে ব্লেন্ড করে রস ছেঁকে নিন। সকালে খালি পেটে এই রস পান করুন। ভালো ফল পেতে মুলার সঙ্গে গাজর ও শসার রসও মিশিয়ে নিতে পারেন। 
6. তুলসী পাতায় থাকা অ্যাসিটিক অ্যাসিড কিডনির পাথরকে ভেঙে ফেলতে সাহায্য করে। পাশাপাশি, এর রসে থাকা অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এজেন্ট কিডনির স্বাস্থ্যকে ঠিক রাখতে সাহায্য করে প্রতিদিন অন্তত দুবার করে তুলসীর রস খান। আর তুলসীর পাতা দিয়ে চা করেও পান করতে পারেন। 
7. ডাবের পানিতে প্রচুর পটাশিয়াম রয়েছে। কিডনির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ডাবের পানির বিকল্প নেই। দিনে দুই ঘণ্টা পর পর এক মগ করে হলেও পানির পাশাপাশি ডাবের পানি পান করুন। এতে ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ পাবে। সঙ্গে কিডনির পাথর গলতেও সাহায্য করবে। এর ফলে প্রস্রাবের জ্বালা-পোড়া ভাবও কমবে। 
8. মেথি বীজ কিডনিতে পাথর প্রতিরোধ ও চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, বীজগুলো কিডনিতে জমাকৃত পাথর হ্রাস করে ও কিডনির পাথর প্রতিরোধ করে। এক কাপ ফোটানো জলে ১ থেকে ২ চা চামচ শুকনো মেথি বীজ দিন। এটি প্রতিদিন পান করুন। 
9. কালিজিরা বীজ একটি গবেষণা অনুযায়ী, কালিজিরার বীজ কিডনিতে ক্যালসিয়াম অক্সালেট স্টোন গঠনে উল্লেখযোগ্যভাবে বাধা দেয়। ২৫০ এমএল গরম জলে হাফ চা চামচ শুকনো কালিজিরা বীজ দিন। এটি দিনে দু’বার পান করুন।

Mohammad Ismail

I am a hardware and software engineer and the founding editor of Travelgreencity.com. On this website we provide support and service for all technology and mobile related issues.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button